জমে থাকা প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে ভিডিওতে যা বলেছেন বুবলী
- আপডেট সময় : ০৪:১২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২২
- / ১৬৩৩ বার পড়া হয়েছে
সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী শবনম বুবলীকে ঘীরে জমে থাকা অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে একটি রেকর্ড করা ভিডিও আপলোড করেছেন অভিনেত্রী।
রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৪১ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন অভিনেত্রী বুবলী।
ভিডিওতে বেবি বাম্প দিয়ে শুরু করে শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ের খবর, সন্তান শেহজাদ খান বীরকে সামনে আনা, বিয়ের তারিখ জানানো, সন্তানের জন্মতারিখ -একে একে সকল প্রশ্নের উত্তর দেন ঢালিউডের এই অভিনেত্রী।
এতাদিন যা রাখা হয়েছিল অতি গোপনে এক ভিডিও ক্লিপে তাই সামনে এনেছেন ঢালিউডের এই অভিনেত্রী।
প্রথমেই তিনি শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক ভাঙার কারণ যে তিনি নন, সেটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের সম্পর্কের কথা জানতেন না দাবি করে বলেন, ‘২০১৭ তে শাকিব-অপুর বিয়ের বিষয়টি জানার কিছু আগে তিনি (শাকিব খান) আমাকে বলতেন যে, কিছু বিষয় তিনি আমার সঙ্গে শেয়ার করবেন। ওই সময় আমরা সিঙ্গেল ছিলাম, ওই ভাবেই তিনি প্রেজেন্ট করেছেন বা তিনি হয়তো ভেবেছেন বিষয়টি পরে বলবেন। একটা ভালো লাগার বিষয় তো ছিলই, সেটা যে প্রথম সিনেমা থেকেই, তা না। খুব প্রেম, বন্ধুত্ব যে প্রথম থেকেই ছিল তা না। তবে তিনি চাচ্ছিলেন সেটেল হতে।
‘২০১৭ তে যখন বিষয়টি সবার সামনে আসলো এবং আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনিও অবাক হয়েছেন যে সেসব ভিডিওতে আমার প্রসঙ্গটা কেন আসল।’
বুবলী বলেন, ‘২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল লাইভ অনুষ্ঠানে আসার আগে আমাকে অপু বিশ্বাস ফোন করেছিলেন এবং অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলেন, আমি বুঝতে পারিনি কেন এমন বাজে ব্যবহার করছেন। সেই কষ্ট থেকেই কিন্তু তিনি লাইভে আসার পর আমি স্ট্যাটাসটা দিয়েছিলাম। আমার কষ্টের জায়গাটা হলো, আমি তো এসবের (শাকিব খান, অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক) কিছুই জানিনা। যেভাবে আমাকে প্রেজেন্ট করা হয়েছে, সেখানে তো আমি নেই।’
বিচ্ছেদের পর কেউ যদি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, তাহলে কি সেটা সেই নতুন মানুষটির দোষ? প্রশ্ন রেখে বুবলী বলেন, ‘তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তারা তো ম্যাচিওর। শাকিব খান নিজেই আমাকে বলেছেন যে তিনি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সুখী নন। তিনি তার জায়গা থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। যেটা আমি তার সম্মানার্থে আগেও বলিনি, আজও বলবো না। এটুকু বলি, আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের সমস্যাগুলো তো অনেক আগে থেকেই।’
অপু বিশ্বাসকে চারবার গর্ভপাত করাতে হয়েছে উল্লেখ করে বুবলী বলেন, ‘কোনো হ্যাপি ফ্যামিলিতে কেউ কখনও বাচ্চা চাই অথবা সংসার চাই ধরনের কথা বলে কি না আমার জানা নেই। এসব ঘটনা যখন ঘটে তখন তো আমি ছিলাম না, তাহলে আমাকে কেন জড়ানো হলো। কেন বলা হলো আমার কারণে কারও সংসার ভেঙেছে, আমার কারণে কারও সম্পর্ক ভেঙেছে, কারও সুখের জায়গায় সমস্যা হয়েছে। আমি দর্শকদের স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, এ সময়ে আমি ছিলাম না। আমার কারণে কোনো সংসার ভাঙেনি।’
ভিডিওতে তিনি আরও কথা বলেছেন নিজের জন্মদিনে শাকিব খানের দেয়া নাকফুল, তাজমহলে শাকিব খানের সঙ্গে ছবি, শাকিব খানের অর্থ সহায়তা দেয়ার গুঞ্জন, ভুল তথ্য দেয়া, শাকিবের বড় ছেলে জয়ের জন্মদিনে তার বেবি বাম্পের ছবি দেয়ার মতো নানা বিষয় নিয়ে।
শাকিবের বড় ছেলে আব্রাম খান জয়ের জন্মদিনেই কেন বেবি বাম্পের ছবি আপলোড করা হলো? -এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বুবলী বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে আমি শাকিব খানকে সবসময় পজিটিভলি দেখতে বলি। জয়কে কতটা সাপোর্ট করি সেটা শাকিব খান ভালো জানেন। ছোট বেলা থেকেই, যখন থেকে আমি জেনেছি।
‘জয় কোন স্কুলে পড়বে, কি করলে ওর ভবিষ্যৎ ভালো হবে সব কিছু নিয়েই আমি পরামর্শ দিয়েছি শাকিব খানকে। জয় এবার সম্ভবত ৬ বছরে পরলো। কই আগের বছরগুলোতে তো আমি কিছু করিনি। গত বছরেও তো কিছু করিনি। গত বছর বা তার আগের বছরেও তো আমার নিজের সন্তানও ছিল।’ যোগ করেন বুবলী
বুবলী জানান, তিনিও তো মানুষ, তার কষ্ট, ইমোশন থাকতে পারে। বুবলী তার ইমোশনের জায়গা থেকে বেবি বাম্পের ছবি শেয়ার করেছিলেন বলে দাবি তার।
শাকিব খানের দেয়া আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি অমূলক বলে দাবি করেন বুবলী। বলেন, ‘আমার বিয়ের পর থেকে এবং আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসার পর থেকে কোনো আর্থিক সাপোর্ট তার কাছ থেকে নেইনি। তিনি স্বামী হিসেবে, বাবা হিসেবে যতটুকু করেন, সেটাই। এটা তার ওপর। আমেরিকাতে যখন আমার বেবিকে নিয়ে ছিলাম। এক বছরে অনেক খরচ হয়েছে। সেখানে ১৫ হাজার ডলার তিনি দিয়েছিলেন এবং আমি প্রায় ৩০ হাজার ডলার আমি খরচ করেছি।’
এসময় ভিডিও বার্তায় জন্মদিনে স্বামী শাকিব খানের কাছ থেকে নাকফুল পাওয়ার ঘটনাটি সত্য দাবি করেন বুবলী। যদিও নাকফুলের ছবিটি বুবলী পোস্ট করার পর শাকিব খান গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তিনি কোনো নাকফুল দেননি।
বিষয়টি নিয়ে বুবলী বলেন, ‘স্বামী যদি স্ত্রীকে কোনো কিছু উপহার দেন এবং সেটি যদি প্রমাণ করতে হয়… এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তার যেটা ভালো মনে হয়েছে, তিনি সেটা বলেছেন। এটা যদি আমি প্রমাণ করতে যাই, তাহলে তাকে অসম্মান করা হয়।’
এর আগে বুবলী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২১ নভেম্বর একটি ছবি পোস্ট করেন। বুবলী জানান, শাকিব খান ও তিনি তাজমহলে ঘুরতে গিয়েছিলেন, ছবিটি সেই সময়ের। এটি নিয়েও কেন জবাবদিহি করতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বুবলী। তিনি বলেন, ‘ছবিটি যখন তোলা হয়, তখন তো সবাই বিষয়টা জানতেন না। তাই ছবিটি তখন প্রকাশ করা যায়নি। এখন আমার মনে হয়েছে যে সুন্দর এ স্মৃতিগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করি, তাই পোস্ট করেছি।’
আমেরিকা যাওয়ার আগে ও পরের কথার মাঝে কোন পার্থক্য নেই জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমেরিকা থেকে ফেরার পর আপনাদের ভুল স্টেটমেন্ট আমি দেয়নি। প্রশ্ন করলে আমি বলেছি যে, ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে আমি বাইরে ছিলাম, সময় হলে সব জানাব। মা হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমি বিষয়টি আমি অন্যভাবে উত্তর দিয়েছি। কারণ সেই সময়টা ভালো সময় ছিল না উত্তর দেয়ার জন্য। আমি বলেছিলাম নিউ ইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে কোর্স করেছি এবং সেটা আসলেই করেছি, আমার কাছে তার সার্টিফিকেট আছে।’
বিভিন্ন বিষয় খোলাসা করার পর ভিডিওর শেষের দিকে বুবলী বলেন, ‘কিছু জিনিস শেয়ার করেছি আমার সন্তানের জন্য। ও তো বড় হচ্ছে এবং আপনারা অনেক সময় ওকেও বিভিন্ন বিষয়ে ইনভলব করে ফেলেন। ওর কোনো দোষ নেই, ও তো ছোট মানুষ।’
আক্ষেপের সুরে বুবলী বলেন, ‘ওর তো তিন বছর প্রায়। আমরা চেয়েছিলাম যে, আমরা একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ওকে সামনে আনার, হয়তো হচ্ছিল না কোনোভাবে। আমি তো অলরেডি তিন বছর ওয়েট করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পরেও কিন্তু আমি কারও বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি, আজকেও করছি না।’
সন্তান শেহজাদের জন্যই আসলে বুবলীর এ কথা বলা বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘না হলে ও হয়তো কখনও কোনো সময় প্রশ্ন করবে, মা তুমি তো কোনো কথা বলোনি কখনও।’
এই ভিডিওতে নানা সময়ে জানতে চাওয়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও দর্শকদের মনে থাকা সংশয় দূর করে সন্তান সেহজাদের উদ্দেশে বুবলী বলেন, ‘বাবা শেহজাদ, মা হয়ে তোমার পাশে সারা জীবন থাকব না বাবা। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি এবং করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, তোমাকে বড় করা।
’আমি সব সময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি থাকব। তুমি মানুষের মতো মানুষ হও বাবা এবং একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি হয়তো আমার জায়গা থেকে সব সময় তোমাকে সেরাটা দিতে পারি না। তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’