বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি, তীব্র হচ্ছে গবাদি পশু ও শিশু খাদ্যের সংকট
- আপডেট সময় : ১২:১৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০
- / ১৫৪০ বার পড়া হয়েছে
গত ক’দিন ধরে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার প্রায় ৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ঘর-বাড়ি ও নলকুপ তলিয়ে থাকায় নদ-নদী অববাহিকার আড়াই শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন। তীব্র হচ্ছে গবাদি পশু ও শিশু খাদ্যের সংকটও। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় ৪৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে সকালে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
উজানের ঢল আর টানা বর্ষণে ২য় দফায় টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, ডুবে গেছে রাস্তাঘাট।
মানিকগঞ্জে যমুনা নদীর পানি আরিচা পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ২৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরিচা পয়েন্টের গেইজ রিডার মোহাম্মদ ফারুক আহম্মেদ জানান, সকালে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। যমুনা ও পদ্মা নদী ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলায় বয়ে যাওয়া গাজীখালী, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গাসহ অভ্যন্তরীণ সব নদীর পানি বৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে।
সিরাজগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় অস্বাভাবিক গতিতে পানি বেড়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে প্রমত্তা যমুনা। ২৪ ঘন্টায় কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং একই সময় শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্টে যমুনার পানি আরও ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ভারী বর্ষণ ও উজানের ভারতীয় ঢলে গাইবান্ধায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদী গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গাইবান্ধা-সাঘাটা অঞ্চলিক সড়কের উল্যা-ভরতখালী এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাধের উপর দিয়েও পানি গড়াচ্ছে।
টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সারিয়াকন্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে চরাঞ্চলসহ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারী হিসেবেই সারিয়াতান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী।
নেত্রকোনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সকালে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। জেলার ১০টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে। এদিকে, কলমাকান্দা বেশি প্লাবিত হওয়ায় প্রতিটি স্কুল-মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
দিনাজপুরের পুনর্ভবা, আত্রাই ও ছোট যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পানিবন্দী এসব মানুষ উঁচু এলাকা ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে, তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, সবজি ও ভুট্টাক্ষেত।
ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনায় বাড়ছে পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সকালে যমুনা নদীর পানি নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পদ্মা নদী বিপদসীমার মাত্র ১.১৭ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। এতে তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো।
এদিকে, পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের নদী ভাঙ্গনের ব্যাপকতা বেড়েছে। বিস্তীর্ণ জনপদসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুত ও সড়ক ব্যবস্থা। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে ঘরবাড়িসহ একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা।