নির্বাচন পর্যবেক্ষণ: ইইউর প্রভাব কি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পড়বে?
- আপডেট সময় : ০১:১৩:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৭২৩ বার পড়া হয়েছে
ঢাকায় কাজ শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল৷ রোববার তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে৷
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে সোমবার বৈঠক করবেন তারা৷ এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে সফর করে৷ এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায়৷
যুক্তরাষ্ট্র কী করবে সেটাই এখন প্রশ্ন৷ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে৷ আর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন ইইউ-এর পর যুক্তরাষ্ট্রও একই সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক হবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করছে৷ এনডিআই এবং আইআরআই হল নির্দলীয় বেসরকারি সংস্থা, যা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করতে কাজ করে৷ সংস্থা দুটি সম্মিলিতভাবে গত ৩০ বছরে ৫০টিরও বেশি দেশে ২০০টিরও বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে৷
প্রতিনিধি দলটি আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে৷ তাদের মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করছে আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কীনা৷
তারা সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে যাচাই করবেন৷ বিশেষ করে নির্বাচনের পরিবেশের ওপর জোর দেবেন৷ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য এনডিআইয়ের নীতিমালার ঘোষণা অনুযায়ী একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) পরিচালনা করতে তারা এসেছেন৷ সফরকালে পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা নির্বাচন কমিশন, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি দূতাবাস ও বিভিন্ন হাইকমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷
শনিবার ঢাকায় আসার পর রোববার দুপুরের পর তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সোমবার তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন৷ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের কথা মঙ্গলবার৷
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘তারা বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে৷ তারা বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় কাজ করেছে৷ তারা অনেক দিন ধরেই কাজ করছে এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে৷”
তিনি জানান, নির্বাচনের আইন কানুন, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ অবাধ,সুষ্ঠু ও অংশহণমূলক নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার তার সবকিছুই তারা খতিয়ে দেখে৷
তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠায় তাহলে তা আমাদের জন্য দুঃখজনক হবে৷”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে৷ কারণ তারা একইভাবে কাজ করে৷ তারপরও তারা প্রাক-পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছে তাদের মতো করে সার্বিক পরিস্থিতি অনুসন্ধান করতে৷
তিনি বলেন, ‘‘২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আমরা যখন নির্বাচন কমিশনে ছিলাম তখন ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ সব আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাই এসেছিলেন৷ সেই সময়ের সঙ্গে এখনকার নির্বাচনি পরিবেশের তুলনা চলে না৷ আকাশ-পাতাল পার্থক্য৷”
তার মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ইইউ দলের চেয়ে পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের এই দলটি৷ বলেন, ‘‘তারা যদি শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষক পাঠায় তাদের টিম অত বড় হবে না৷ তারা দূতাবাসের মাধ্যমে এখান থেকেও লোক নিয়োগ দেয়৷”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রণমূলক নির্বাচনের জন্য তৎপরতা দেখাচ্ছে৷ এরইমধ্যে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রণমূলক নির্বাচনের পথে যারা বাধা তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে দিতে শুরু করেছে৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ