মেয়েদের ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ফারজানা
- আপডেট সময় : ০৩:৩৪:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
- / ১৬৮৪ বার পড়া হয়েছে
মেহরাব হোসেন অপি, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তামিম ইকবাল..এই তালিকায় ঢুকে গেলেন ফারজানা হক পিঙ্কিও। মেহরাব, আমিনুল, তামিম যথাক্রমে ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান।
ফারজানা হক পিঙ্কি শনিবার ভারতের বিপক্ষে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে করেছেন শতরান। নিজের ৫৩তম ওয়ানডে ইনিংসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দেখা পেলেন ফারজানা।
প্রায় এক দশক আগে, ভারতের বিপক্ষেই আহমেদাবাদে অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সালমা খাতুন, এতদিন সেটাই ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ফারজানা এর আগে নয়টা হাফসেঞ্চুরি করলেও সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ৭১ রানের, করেছিলেন গত বছর হ্যামিলটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে। শনিবার নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন ফারজানা, গড়লেন ইতিহাস। প্রথম ম্যাচে ফারজানা নেমেছিলেন ওয়ান ডাউনে,করেছিলেন ২৭ রান। পরের ম্যাচেও ওয়ান ডাউনে, করেছেন ৪৭ রান।
ভারতের বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে ভালোই করছিলেন ফারজানা, কিন্তু ইনিংসটা বড় হচ্ছিল না। আগের ম্যাচেও রিতু মনিকে সঙ্গে নিয়ে ফারজানা যখন ব্যাট করছিলেন, তখন জয়ের সম্ভাবনা দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের বিদায়ে তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার।
তৃতীয় ওয়ানডের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কান কোচ হাশান তিলকারত্নে বলেছিলেন, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের ‘‘মানসিকতা বড় ইনিংস খেলার জন্য প্রস্তুত নয়।এছাড়া ফিটনেসও গড়পড়তার নীচে” – সেটাই কি তাতিয়ে দিলো ফারজানাকে?
সিরিজ এ মুহূর্তে ১-১ সমতায়, তাই শেষ ম্যাচ জয়ী দলই জিতবে সিরিজ। ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো ম্যাচে নতুন ইতিহাস লিখলেন ফারজানা। শেষ ম্যাচে ফারজানা নেমেছেন ইনিংসের সূচনায়, সঙ্গে ছিলেন সিরিজে এই ম্যাচেই প্রথম দলে সুযোগ পাওয়া শামীমা । দুজনে মিলে শুরুটা করেছেন ধীরস্থির, সাবধানী। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে দলের রান মাত্র ৩২, তবে কোনো উইকেট না হারিয়ে। অল্পের জন্য হয়নি শতরানের উদ্বোধনী জুটি, ফারজানাকে রেখে বিদায় নেন হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া শামীমা (৫২)। তাতে দমে যাননি ফারজানা, অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে নিয়ে ৮৫ বলে ৭১ রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহকে বাড়িয়ে নেয়ার পাশাপাশি নিজেও এগিয়ে যান শতরানের দিকে।
৮২ থেকে ৯০ এর ঘরে পৌঁছে যান দ্রুতই, মেঘনা সিংয়ের ওভারে দুটো ডাবলসের পর দুটো বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। ১০০ রান থেকে যখন মাত্র ৬ রান দূরে, তখন খানিকটা ছটফটে। একবার রানআউটের হাত থেকেও বেঁচেছেন। শেফালি ভার্মার বলে দ্রুত ১ রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, ডাইভ দিয়ে উইকেটে পৌঁছালেও ফিজিওর শরণ নিতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শেফালি ভার্মার বলে কভার দিয়ে চার মেরে সেঞ্চুরি করেনফারজানা। ১৫৬ বল খেলেছেন সেঞ্চুরি করতে, চার মেরেছেন ৭টি। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হয়েছেন ফারজানা, না হলে ইনিংসে আদ্যান্ত ব্যাট করার রেকর্ডও করতে পারতেন। শুধু শতরানের হিসেবেই নয়, বল খেলার হিসেবেও ফারজানার ইনিংসটি স্থান পেয়েছে রেকর্ড বইতে। ওয়ানডে ইতিহাসের পঞ্চম দীর্ঘতম ইনিংসটি ফারজানার, এক ম্যাচে তার চেয়ে বেশি বল খেলেছেন আর মাত্র ৪ জন ব্যাটার।
ফারজানার শতরানে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, ৪ উইকেটে ২২৫ রান করেছে বাংলাদেশ। হ্যামিলটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস।
ফারজানার এই ইনিংসে ভর করে গড়া বড় সংগ্রহেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সম্ভাবনা দেখছে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের।
ডয়চে ভেলে