সমকামীদের শাস্তি নিয়ে ইরাকে বিতর্ক
- আপডেট সময় : ০৬:১৭:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৭০৭ বার পড়া হয়েছে
সমকামীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইন পাশ করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক৷ ইতিমধ্যে বিলের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে৷
সমালোচকেরা বলছেন, দেশটির বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণকে দৃষ্টি সড়িয়ে নিতে সমকামীদের নিয়ে এমন আইন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার৷
দেশটির বিদ্যমান ‘ল অন কমবেটিং প্রস্টিটিউশন ১৯৮৮’ নামে আইনের সংস্কার করার লক্ষ্যে খসড়া আইনটি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন সাংসদ রাদ আল মালিকি৷ আইনটি পাশ হলে, সমলিঙ্গের ব্যাক্তিদের সম্পর্ক শাস্তিু হবে মৃত্যুদণ্ড বা দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড৷ শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত এই আইন ট্রান্সজেন্ডার নারীদের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে৷ ‘নারীদের বেশ ধারণকারী’ ব্যক্তির তিন বছরের কারাদণ্ড বা সাত হাজার ৭০০ ইউরো (প্রায় আট লাখ টাকা) জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ নারীদের বেশ ধারণকারী বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা নারীদের পোশাক পরিধান করেন বা সাজসজ্জা করেন৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এলজিবিটিকিউ গবেষক রাশা ইউনেস বলেন, আইনটি হঠাৎ করেই করা হয়েছে বিষয়টি এমন নয়৷ এটি ইরাকে চলমান জন অসন্তোষের সাথে সম্পর্কিত৷
এটি এমন সময়ে করা হয়েছে যখন দেশের জনগণের মূল দাবিদাওয়া মেনেনিতে গিয়ে সরকারকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, বলেন তিনি৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সমলিঙ্গের ব্যক্তিদের সম্পর্ককে আইনে যৌন বিকৃতি বলে ব্যাখা করা হয়েছে৷ তাছাড়া যারা ‘সমকামিতাকে উৎসাহিত করছে’ তাদের সাত বছরের জেল এবং ১০ হাজার ৬০০ ইউরো জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কোন ধরনের আচরণ সমকামিতাকে উৎসাহিত করছে সে বিষয়টি আইনে স্পষ্ট করা হয়নি৷
দায়মুক্তির সংস্কৃতি
সমকামীদের সম্পর্কের বিরোধিতায় ইরাকে এখন পর্যন্ত কোনো আইন নেই৷ তবে সরকার এলজিবিটিকিউদের বিরুদ্ধে মূলত ‘নৈতিকতা আইনকে’ ব্যবহার করছে৷
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘‘সশস্ত্র গ্রুপ এবং ব্যাক্তি পর্যায় থেকে কয়েক দশক ধরে এলজিবিটিকিউ সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা চলছে৷ এমন হামলা ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটছে এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না৷”
এমন পরিস্থিতিতে নতুন এই আইন ‘আগুনে তেল ঢালার’ মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে, বললেন ইউনেস৷
ইরাকুয়্যার নামে ইরাকের একমাত্র এলজিবিটিকিউ সংস্থার প্রধান আমির আসোর বলেন, ‘‘আইনটি পাশ হলে সমকামীদের উপর সাধারণ মানুষের হামলা আরো সহজ হবে৷”
তিনি বলেন এই আইনটি ইরাকের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী যেখানে লিঙ্গভিত্তিক পরিচয়ের সব ধরনের মানুষের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে৷
অবশ্য এই আইনটি পাশের জন্য বেশ কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করছে ইরাক সরকার৷
গত আগস্ট মাসে দেশটির কমিউকেশন অ্যান্ড মিডিয়া কমিশন একটি নির্দেশনা জারি করে৷ নির্দেশনায় গণমাধ্যমগুলোকে সমকামী কথাটির পরিবর্তে ‘যৌন বিকৃতি’ ‘sexual deviance’ কথাটি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে৷ সেইসঙ্গে লিঙ্গ শব্দটি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷
এদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় আধা-স্বায়ত্ত্বশাসিত ইরাকি কুর্দিস্তানে ইতিমধ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে সেখানকার পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপন করা হয়৷ বিলে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠিা যদি সমকামিতাকে উৎসাহিত করে তাহলে তাদেরকে শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে৷
ইরাকের এলজিবিটিকিউ সদস্যরা বরাবরইতাদের উপর নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন৷
কালচার ম্যাগাজিন রাসেফ ২২-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ৪৩ বছরের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘‘লিঙ্গের পরিচয়ের কারণে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে যখন শুনতে পাই আমার খুব খারাপ লাগে৷ আর আমি ভয় পাই৷ কারণ আমি জানি যে আমিও এমন বিপদে আছি৷ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা কার ছাড়া বা এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেইা৷”
লেখক আমরো আল-কাধি অবশ্য মনে করেন সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি ইরাকের মানুষের যে অনীহা বা বিরাগ সেটি আরব সমাজের পাবারিকির যে কাঠামো তার মধ্যেই নিহিত আছে৷
আরবে লিজিবিটিকিউ নিয়ে নিজের লেখা বইয়ে আল-খাদি জানান ছোটবেলায় তার মা তাকে বলতেন, ‘‘তুমি আসলে তুমি নও, তুমি হচ্ছ আমি৷”
‘‘অবশ্যই আমি আরবের সব পরিবারের কথা আমি বলতে পারি না৷ কিন্তু ইরাকের যেই সমাজে আমি বড় হয়েছি সেখানে বাবা-মায়েরা সন্তানকে নিজেদের সামাজিক প্রতিমূর্তি হিসেবে দেখেন৷ একজন ব্যাক্তি যার নিজের ইচ্ছা এবং স্বাধীনতা থাকতে পারে সেভাবে দেখা হয় না৷ বরং একটি বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে দেখা হয় যার লক্ষ্য হবে বৃহত্তর পারিবারিক ইউনিটি নিশ্চিত করা৷”
যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংস্থা টি ব্রাউনের প্রধান নির্বাহি বলেন, ইরাকে যা হচ্ছে তা আসলে নতুন কিছু নয়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এটি একটি নিষ্ঠুর শাস্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ