সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৫ জনের মৃত্যু
- আপডেট সময় : ০৮:২৩:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০২০
- / ১৫৩৫ বার পড়া হয়েছে
সুপার সাইক্লোন আম্পান স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে আম্পানের প্রভাবে গাছচাপা পড়ে ও পানিতে ডুবে বরিশাল বিভাগে শিশুসহ ৫ জন, যশোরে মা ও মেয়েসহ ৫ জন, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঘর-বাড়িসহ আম, লিচু ও আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকে জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এরই মধ্যে আস্পান স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে স্থলভাগ অতিক্রমকালে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে সাগর এখনো উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কাঁচা ঘর-বাড়ি, ফসল, বিদ্যুৎ ও মৎস সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে দ্রুততার সাথে কাজ চলছে জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান।
পটুয়াখালীতে শিশুসহ নিহত দু’জন হলো কলাপাড়া উপজেলার লোন্দা এলাকার সিপিপির দলনেতা শাহ আলম মীর এবং গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকার পাঁচ বছরের শিশু রাসেদ। গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত রাসেদ মায়ের সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার সময় গাছের ডাল ভেঙ্গে চাপা পড়লে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। আর নৌপথে সর্তকতা মূলক প্রচার চালানোর সময় প্রবল বাতাসে নৌকা উল্টে পানিতে ডুবে মারা যান সিপিপির দলনেতা শাহ আলম মীর।
ভোলায় ট্রলার ডুবিতে নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায়। আর গাছচাপায় মারা গেছে চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া এলাকার চিদ্দিক ফকির নামে একজন। এছাড়া আম্পানের প্রভাবে জেলা সদর ও চরফ্যাশনের ঢালচরে বেশ কিছু এলাকায় ১০/১৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বাঁধের বাইরের নিচু এলাকাগুলো।
পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড়ের আম্পানের প্রভাবে ৩ জন নিহত হয়েছে। দেয়াল চাপা পড়ে মারা যান মঠবাড়িয়ার গিলাবাদ গ্রামের মৃত মজিদ মোল্লার ছেলে শাহজাহান মোল্লা এবং আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মারা যান দুপাদী গ্রামের মৃত মুজাহার আলীর স্ত্রী গলেনুর বেগম। অন্যদিকে ঝড়ের তান্ডব আতঙ্কে মারা গেছেন ইন্দুরকানী উপজেলার উমিতপুর গ্রামে মৃত মতিউর রহমানের ছেলে শাহ আলম।
যশোরে আম্পানের আঘাতে ঘরের উপর গাছ ও দেয়ালচাপা পড়ে চৌগাছায় মা ও মেয়েসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, চৌগাছার চায়না খাতুন, তার মেয়ে রাজিয়া খাতুন, এছাড়া শার্শা জামতলার মোক্তার আলী, গোগা পশ্চিমপাড়ার ময়না খাতুন, বাঘারপাড়া বুধোপুরের ডলি বেগম। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় ৩ শিশুসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে ঝড়ের আগে কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারলেও সবজি, আম ও লিচুসহ চলমান ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঝিনাইদহে আম্পানের ঝড়ে গাছচাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাতে স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। মধ্যরাতে একটি বটগাছ উপড়ে তাদের ঘরের উপর পড়ে। এতে স্ত্রী নাদেরা বেগম মারা যায়। আহত হন তার স্বামী।
সাতক্ষীরা শহরের কামাল নগর এলাকায় ঝড়ের মাঝে আম কুড়াতে গিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলায় ১৭টি পয়েন্টে বেড়ীবাঁধ ভেঙে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও আশাশুনির সদর ইউনিয়নের ১৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়া প্রচুর মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে।
বাগরেহাটের শরণখোলায় বগী-গাবতলা অংশর দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে কয়কটি গ্রাম প্লাবতি হয়ে পানি বন্দি হয়ে পড়ে বেশ কিছু পরিবার। এছাড়া বিধ্বস্ত হয়েছে বাঁধের আশেপাশের বেশকিছু কাচা ঘর বাড়ি ও গাছপালা। অন্যদিকে পাচঁ শতাধকি মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, নাচোল, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটে ৫ ভাগ আম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পেপে ও কলার।
মেহেরপুর জেলায় কাঁচাপাকা বাড়ি, ফসল, বৈদুতিক খুঁটি, গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও তথ্য যাচাইয়ে কৃষি ও বিদ্যুৎ বিভাগের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
নাটোরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আম, লিচু, ভুট্টা, পাট, তিলসহ আবাদি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আম এবং লিচু ঝরে পড়ে যায়। এছাড়া ভারী বৃষ্টির ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।