হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর ২০২২ প্রোগ্রামে বাংলাদেশের বিজয়ী ছয় স্টার্টআপের নাম ঘোষণা
- আপডেট সময় : ০৫:২৪:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০২২
- / ১৫৩৮ বার পড়া হয়েছে
হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর ২০২২ প্রোগ্রামের বিজয়ী হিসেবে ছয়টি স্টার্টআপের নাম ঘোষণা করেছে হুয়াওয়ে। বিজয়ী স্টার্টআপগুলো এ খাত সম্পর্কে আরও জানতে জন্য বিশ্বের অন্যান্য সফল স্টার্টআপের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাবেন। এছাড়াও, পুরস্কার হিসেবে সিড মানিও পাবেন তাঁরা।
আজ রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ একাডেমির (আইডিয়া) সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে।
এই প্রতিযোগিতায় ‘আইডিয়া স্টেজ’ ও ‘আর্লি স্টেজ’ – এই দু’টি গ্রুপ থেকেই তিন জন করে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়েছে। ‘আইডিয়া স্টেজ’(Idea Stage) -এ বিজয়ী স্টার্টআপগুলো হচ্ছে: ইনসিউরকাউ (চ্যাম্পিয়ন), দুর্জয় ডিএসএস (প্রথম রানার্স আপ) ও রিল্যাক্সি (দ্বিতীয় রানার্স আপ)। এবং আর্লি স্টেজে (Early Stage) বিজয়ী স্টার্টআপগুলো হচ্ছে: জাহাজী লিমিটেড (চ্যাম্পিয়ন), পালকি (প্রথম রানার্স আপ) ও উইগ্রো টেকনোলোজিস লিমিটেড (দ্বিতীয় রানার্স আপ)।
চ্যাম্পিয়ন স্টার্টআপ পুরস্কার হিসেবে পাবে ৫ লাখ টাকা এবং ১ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট। অন্যদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ পাবে যথাক্রমে ৩ লাখ ও ১ লাখ টাকা প্রাইজ মানি এবং ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট। এছাড়াও, প্রত্যেক স্টার্টআপের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা দেশের বাইরে সফল স্টার্টআপের প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করা সুযোগ পাবেন।
বিজয়ীদের নির্ধারণ করার জন্য স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইডিয়া, হুয়াওয়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিষ্টেমের অন্যান্য স্বনামধন্য ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন বিচারকদের প্যানেল গঠন করা হয়। আজকে এই অনুষ্ঠানে তাঁদের উপস্থিতিতে সম্মানিত অতিথিগণ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থতি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মাননীয় রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে আরও উপস্থতি ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং, পিএইচ.ডি., হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী প্যান জুনফেং, স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ, আইসিটি বিভাগের বিসিসি’র প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আলতাফ হোসেন।
এ নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, “একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ৩৫ বছরে হুয়াওয়ে আজকে বিশাল একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
আমাদের তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে আমরা বেশ কিছু ইনস্টিটিউট চালু করেছি, যা তাদের ভবিষ্যত উপযোগী দক্ষতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আইসিটি বিভাগের সাথে হুয়াওয়ে তিনটি চলমান প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে। এজন্য হুয়াওয়েকে আমি ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি, বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ও ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা প্রদানে হুয়াওয়ে যেনো বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে, সে অনুরোধ জানাই। হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর-২০২২ এ অংশ নেয়া সকল অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের জন্য শুভকামনা।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মাননীয় রাষ্ট্রদূত লি জিমিং অনুষ্ঠানে বলেন, “চীন ও বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করে। ২০১০ সাল থেকে বারো বছর ধরে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে এবং এফডিআই -এও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে, চীনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ অবকাঠামো, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। এসব খাতের মধ্যে আইসিটি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময়। আমি আত্মবিশ্বাসী, এ দুই দেশ আরও ভালোভাবে আইসিটি খাতে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারবে এবং আমার মনে হয় চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই এর সুফল পাবে।”
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং, পিএইচ.ডি বলেন, “হুয়াওয়ের মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তরুণদের সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করছে, এটা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার জানামতে, এই ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম ছাড়াও হুয়াওয়ে দেশের তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে অন্যান্য কর্মসূচি, যেমন: সিডস ফর দ্য ফিউচার, আইসিটি স্কিল কম্পিটিশন পরিচালনা করছে। পাশাপাশি, তরুণদের দক্ষতা বিকাশে হুয়াওয়ে আইসিটি একাডেমি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদারিত্ব করছে।”
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী প্যান জুনফেং বলেন, “বিগত ২৩ বছর ধরে হুয়াওয়ে আইসিটি খাত, টেলিকম অপারেটর ও স্থানীয় অংশীদারদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের তরুণদের ক্ষমতায়নে, প্রশিক্ষণে এবং তাদের জন্য অভাবনীয় সব সুযোগ তৈরিতে আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই অংশ এই হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম। এ কর্মসূচিজুড়ে অংশগ্রহণকারীরা খাত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানার সুযোগ পেয়েছেন এবং তাদের ধারণাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেছেন। সকল বিজয়ীদের আমি অভিনন্দন জানাই। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে তাঁদের মধ্যে এই হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর ভূমিকা রাখবে।”
স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, “এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নতি হচ্ছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ ‘আর্লি স্টেজ’ ও ‘আইডিয়া স্টেজ’র স্টার্টআপগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য তরুণ স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা যা আমাদের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । এই প্রোগ্রামের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে এটি আমাদের জন্য চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা ছিল এবং এটা আমদের কাছে আবারও প্রমানিত হয়েছে যে হুয়াওয়ে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দারুণ”
আইসিটি বিভাগের বিসিসি’র প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আলতাফ হোসেন বলেন, “দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে তরুণরা দক্ষতা ও জ্ঞানের সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় তরুণদের নেতৃত্বে একটি উদ্ভাবনকেন্দ্রিক সংস্কৃতি বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদানের এই চমৎকার উদ্যোগে হুয়াওয়ের সাথে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
জাহাজী লিমিটেড এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা আনন্দিত যে, বাংলাদেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানের জন্য ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে। আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের শুরু থেকেই আমাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ও দক্ষতা বিকাশের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই অর্জিত জ্ঞান আমাদের নিজ নিজ ধারণাগুলোকে কার্যকরী ব্যবসায়িক মডেলে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে। এই প্রোগ্রামটি আয়োজন করার জন্য আমি হুয়াওয়ে, স্টার্টআপ বাংলাদেশ ও আইডিয়ার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
এই বছরের আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের জন্য প্রায় ১৮০ জন অংশগ্রহণকারী আবেদন করেন। ‘আইডিয়া স্টেজ’ ও ‘আর্লি স্টেজ’ এই দু’টি গ্রুপে ভাগ করে মোট ৬৮টি স্টার্টআপকে ইনকিউবেটর বুট ক্যাম্পে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। বুট ক্যাম্পে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে, অংশগ্রহণকারীরা তাদের স্টার্টআপ সংক্রান্ত আইডিয়া (ধারণা) বিচারক প্যানেলের সামনে উপস্থাপন করেন। বিচারক প্যানেলের রায়ের ভিত্তিতে, উভয় পর্যায় থেকে মোট ২০টি স্টার্টআপকে চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য ফাইনালিস্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরিশেষে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আইডিয়া স্টেজ থেকে ৩টি ও আর্লি স্টেজ থেকে ৩টি সহ মোট ছয়টি স্টার্টআপকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।