৩৩ বছরেও ‘নিখুঁত’ হয়নি জার্মানির একত্রীকরণ
- আপডেট সময় : ০৬:২৭:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৭৫০ বার পড়া হয়েছে
পূর্ব জার্মানির কমিশনার কারস্টেন শ্নাইডার ডিডাব্লিউর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক উত্থানের প্রশংসা করেছেন৷ কিন্তু পুনরেকত্রীকরণ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে এখনও অনেক বিভাজন রয়ে গেছে।
বার্লিন প্রাচীর পতনের তিন দশকেরও বেশি সময় পরে জার্মানি রাজনৈতিকভাবে একত্রিত হলেও এখনও রয়ে গেছে বিভাজন রেখা। পূর্ব জার্মানি বিষয়ক মন্ত্রী কারস্টেন শ্নাইডার ডিডাব্লিউকে বলেন, “পুনর্মিলন সম্পূর্ণ হয়েছে, তবে এটি নিখুঁত নয়।” তিনি মনে করেন, নিখুঁত পুনর্মিলনের জন্য মানুষের মনের মধ্যে সেই ধারণাটিকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা প্রয়োজন৷
৩ অক্টোবর দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ দিবস। এ বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের দিনেই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জার্মানর ফেডারেল সরকারের পূর্ব জার্মানি বিষয়ক কমিশনার।
পূর্ব-পশ্চিমে সম্পদের ব্যবধান রয়েছে?
শ্নাইডার মনে করিয়ে দেন যে, ২০২৩ সালে পুরো জার্মানিতে পেনশনের মাত্রায় সামঞ্জস্য আনাটা একটা বড় সাফল্য। প্রাক্তন কমিউনিস্ট জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (পূর্ব জার্মানি)-এর অনেক বাসিন্দাই পেনশন বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন অভিযোগ করে আসছিলেন।
জার্মানির ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির ফলে সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলির কর্মচারিরাও উপকৃত হয়েছেন। তবে শ্নাইডার স্বীকার করেন, “মজুরি এবং সম্পদের মধ্যে এখনও পার্থক্য রয়েছে।”
২০২২ সালে পশ্চিম জার্মানিতে গড় বার্ষিক বেতন পূর্ব জার্মানির তুলনায় বারো হাজার ইউরো ( প্রায় ১৪ লাখ টাকা) বেশি ছিল। নেট সঞ্চয়ের পরিসংখ্যান আরও বেশি অসমতার চিত্র তুলে ধরে। ২০২১ সালে, জার্মান ফেডারেল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে সঞ্চয়ের মধ্যমান পূর্বের রাজ্যগুলোর তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ছিল৷
পূর্ব জার্মানি জুড়ে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলেন শ্নাইডার। অঞ্চলটিকে তিনি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসাবে দেখেন।
সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের রাজধানী ম্যাগডেবার্গে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি ইন্টেল ৩০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগে চিপ কারখানার পরিকল্পনা করছে। এটি জার্মানির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের একটি।
শ্নাইডার বলেন, “পূর্ব জার্মানি এমন একটি অঞ্চল যা পরবর্তী দশকগুলোতে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান তৈরির দিকে এগিয়ে চলেছে।” তিনি বলেন, “শক্তির রূপান্তরে শুধুমাত্র পূর্ব জার্মানিই কাজ করতে পারে, কারণ, আমরা পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র।”
ফেডারেল পরিসংখ্যান দপ্তর ডেস্টাটিস-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, পূর্ব জার্মানিতে কর্মক্ষম বয়সের লোকের সংখ্যা আগামী কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংস্থাটি বলেছে, ২০২২ সালের শেষ দিকে গোটা জার্মানিতে ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মানুষ ছিলেন প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এর মধ্য়ে কেবল ৭২ লাখ বাস করছেন পূর্ব জার্মান রাজ্যগুলোতে।
পরবর্তী দুই দশকে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সেই এই বয়সের মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ১২ লাখ কমবে। ২০৭০ সালের দিকে এই সংখ্যা আরো ২১ লাখ কমতে পারে। পশ্চিমের রাজ্যগুলোতেও এই সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে উচ্চ অভিবাসন হারের কারণে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমাটা অপেক্ষাকৃত কম তাৎপর্যপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পূর্বের বৈচিত্র্য এবং পপুলিজম
পূর্ব জার্মানির জনগণের মধ্যে অতি-ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি – এএফডির প্রতি ক্রমবর্ধমান সমর্থন সম্পর্কে জানতে চাইলে, শ্নাইডার ডিডব্লিউকে বলেন, “পূর্ব জার্মানিতে সব নির্বাচনেই গণতান্ত্রিক দলগুলোরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।”
তিনি পপুলিস্ট রাজনীতির উত্থানের কথা স্বীকার করলেও পূর্ব জার্মানির মানুষের এএফডি-র সমর্থনের কারণ তুলে ধরেন তিনি। লাইপজিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পূর্ব জার্মানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন দেশ শাসন করার জন্য একজন ‘শক্তিশালী নেতা’ প্রয়োজন। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে জার্মানিতে বিদেশির সংখ্যা অনেক বেশি।
শ্নাইডার পূর্ব জার্মানিতে অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাওয়ার প্রসঙ্গে জোর দিতে আগ্রহী। তিনি তার নিজের শহর এরফুর্টের উদাহরণ তুলে ধরেন। সেখানে বসবাসরত জার্মানদের তুলনায় বিদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকদের অনুপাত ১০ বছর আগের দুই শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ১৮ শতাংশ হয়েছে।
তিনি বলেন, “আপনি যদি একটি ভিন্ন সংস্কৃতির কাউকে চেনেন এবং আপনার নিজের সাংস্কৃতিক সচেতনতা বাড়ান, তাহলে কুসংস্কারগুলো ধীরে ধীরে নাই হয়ে যাবে।”
পূর্ব এবং পশ্চিম কতটা ঐক্যবদ্ধ?
পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে এএফডি বিশেষভাবে গ্রামীণ অঞ্চলে শক্তিশালী। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এসব রাজ্যে কমতে থাকা জনসংখ্যা এবং নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা রয়েছে।
শ্নাইডার বলেন, জার্মানি জুড়ে শহর এবং গ্রামীণ এলাকার মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা পশ্চিম অঞ্চলের চেয়ে পূর্বেই বেশি বোঝা যায়।
তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন যে দেশের দুই অঞ্চলের মানুষের দেশ নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবেন। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ৫৭ শতাংশ জার্মানই মনে করেন পূর্ব এবং পশ্চিম “একসঙ্গে বেড়ে ওঠেনি”।
কিন্তু শ্নাইডার ডিডাব্লিউকে বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক পদক্ষেপই সব বৈষম্য়ের সমাধান করতে পারবে না।
তিনি বলেন, “সমাজ থেকেই এটা উঠে আসতে হবে। মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে হবে এবং একে অন্যের প্রতি আচরণে বদল আনতে হবে। আমি মনে করি যে, অনেক পূর্ব জার্মান প্রায়শই নিজেদের কিছুটা প্রতারিত মনে করেন এবং বাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করেন। এবং এমন ভাবার আসলে কোন কারণও নেই।”
ভবিষ্যতে দুই অঞ্চলের মধ্যে আরো বেশি আগ্রহ এবং নানা ধরনের আদানপ্রদান দেখতে চান তিনি।
ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ